কী একটা ম্যাচই না হল! গত বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনর্মঞ্চায়নটা এতটা একপেশে হবে তা মনে হয় কেউ ভাবতেই পারেননি। আগের বিশ্বকাপের ফাইনালটা যতটা রোমাঞ্চকর ছিল এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা হল ঠিক ততটাই একতরফা।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়ে দাপুটে এক জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। শুরুটা কিছুটা আগ্রাসী মেজাজে করে ইংল্যান্ড। প্রথম রান আসে জনি বেয়ারস্টোর মারা ছক্কা থেকে। তার ওপেনিং সঙ্গী ডেভিড মালানকেও সাবলীল মনে হচ্ছিল।
উদ্বোধনী জুটি থেকে রান আসে ৪০। ২৪ বলে ১৪ রান করে আউট হন মালান। বেয়ারস্টোর তাণ্ডবটাও বেশিক্ষণ টেকেনি। দলের ৬৪ রানের মাথায় ৩৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। এরপর যেন কিছুটা কমে আসে ইংল্যান্ডের রানের গতি। তিনে নামা জো রুট এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলে যাচ্ছিলেন। চারে নামা হ্যারি ব্রুক হুট করেই ঝড় তোলেন। তবে তা স্থায়ী হয়নি। ১৬ বলে ২৫ রান করে আউট হন ব্রুক।
সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে ক্রিজে টিকে ছিলেন রুট। দারুণ সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলের ইনিংসটাকে টানছিলেন তিনি। অযথা আক্রমণ না চালিয়ে কার্যকরী ব্যাটিংয়ে এগিয়েছেন রুট। ইংল্যান্ডের ইনিংসও বড় হতে শুরু করে তার ব্যাটে চড়ে। ফিফটিও ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
রুট বাদে বাকি ব্যাটাররা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। ৪২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক জস বাটলার। বাকিরা সবাই বেশ সংগ্রাম করেছেন। শেষ দিকে ৮৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে দলের ২২৯ রানের মাথায় আউট হন রুট। তবুও টেইলএন্ডারদের দৃঢ়তায় ৫০ ওভারের খেলা শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ইংল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪৮ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন ম্যাট হেনরি। এছাড়া ২টি করে উইকেট তোলেন গ্লেন ফিলিপস এবং মিচেল স্যান্টনার।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ওপেনার উইল ইয়াংয়ের উইকেট হারিয়ে হোঁচট খায় নিউজিল্যান্ড। গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন ইয়াং। তবে তাতে কোনো সমস্যা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। তিনে নামা রাচিন রবীন্দ্র এবং ওপেনার ডেভন কনওয়ে মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলের ইনিংস। দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে এগোতে থাকে কিউইদের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের কোনো বোলারকেই পাত্তা দিচ্ছিলেন না রাচিন এবং কনওয়ে। সবাইকে পিটিয়ে তুলোধুনো করে রান তুলছিলেন দুজন। তাদের চরম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন ইংলিশ বোলাররা। দুজনের তুলে নেন দারুণ দুটি ফিফটি।
ফিফটি হাঁকিয়েও থামাথামির কোনো নামগন্ধ ছিল না রাচিন কিংবা কনওয়ের ব্যাটিংয়ে। তাদের চরম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ফলে ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে দলের স্কোরবোর্ড। আর লক্ষ্যটাকেও মনে হচ্ছিল একদমই মামুলি। পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন কনওয়ে এবং রাচিন। ধীরে ধীরে নিউজিল্যান্ডের জয়টাকেও মনে হচ্ছিল অবধারিত।
সেই অবধারিত ব্যাপারটিই ঘটেছে অবশেষে। তবে তার আগে দুজনেই তুলে নিয়েছেন অসাধারণ দুটি সেঞ্চুরি। ৮২ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের রাজসিক জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল নিউজিল্যান্ড। ৯৬ বলে ১২৩ রানের ইনিংস খেলে শেষপর্যন্ত টিকে ছিলেন রাচিন। অন্যদিকে কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রান করে। রাচিন এবং কনওয়ের অবিচ্ছিন্ন জুটি থেকে রান এসেছে ২৭৩। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন দুজন।
ইংল্যান্ডের হয়ে ১ উইকেট শিকার করেন স্যাম কারান। বাকিরা ছিলেন উইকেটশুন্য।