প্রায় ৫০ বছর আগে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে চায়ের দোকান দেন সুলতান উদ্দিন। প্রতিদিন তার চায়ের কাপে তৈরি হয় নতুন নতুন গল্প। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করে সবশেষ ঠাঁই নিয়েছেন মেজরভিটা মোড়ে। শুরুর দিকে চা বিক্রি করতে ৪০ পয়সায়, যা বর্তমানে হয়েছে ৫ টাকা। ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী সকলেই আসেন তার দোকানে। সকলের সঙ্গেই তার মুখ সদা হাস্যোজ্জ্বল।
সুলতানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে উপজেলায় প্রথম চায়ের দোকান দেন তিনি। ২৭ বছর ছিলেন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে। এরপরে জায়গা হয়েছে মেজরভিটা মোড়ে। আজও চলছে সুলতানের চায়ের কাপে নতুন নতুন গল্প। বর্তমান তার বয়স প্রায় সত্তর বছর। দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় থাকায় তার চায়ের প্রতি এলাকার মানুষেরও আলাদা একটা টান তৈরি হয়েছে।
সকাল থেকে অর্ধরাত পর্যন্ত তার দোকানে চলে চায়ের আড্ডা। তার সাথে যারা শুরু করেছিলেন এখন আর কেউ নেই এই পেশায়। তিনি এখনো মানুষের ভালোবাসায় করে যাচ্ছেন চায়ের দোকান। এই ব্যবসা থেকেই মানুষ করেছেন চার ছেলেকে। সেইসাথে সাক্ষী হয়েছেন অনেক আনন্দ-বেদনার।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে সুলতান বলেন, ‘সবাই ভালোবেসে আমার দোকানে আসে। প্রতিদিন যা আয় হয়, তা দিয়ে ছেলে-সন্তান নিয়ে সংসার ভালোই চলছে। মাঝেমধ্যে অনেকেই দোকানে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ফেলে রেখে যায়, আমি যত্ন করে রেখে দেই। পরে এসে যার জিনিস সে নিয়ে যায়। ভালো লাগা আর মায়া থেকে এখনো আছি এই পেশায়।’
তিনি আরও জানা, ‘অন্য কোথাও গেলে হয়তো বেশি টাকা ইনকাম হবে কিন্তু এমন ভালোবাসা, আত্মতৃপ্তি পাব না। সবার ভালোবাসা নিয়েই আমি এখানে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।’
কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে চা খাই। সুলতান ভাইয়ের দোকানই একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা প্রায় সবসময় আড্ডা দেই। এখানে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মচারী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তি সকলেই বসে। ভাই সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। কোনোদিন ভাইকে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি।
ভালুকা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আনছারী আকরাম বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যেই এখানে চা খেতে আসি। সুলতান ভাইয়ের সঙ্গে কখনো কারো মনোমালিন্য হতে দেখিনি। তাকে যেমন সবাই শ্রদ্ধা করে, তিনিও তেমন সবাইকে সম্মান করেন। নমনীয় আচার ব্যবহারে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।