ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নিকট একটি চিঠি লিখে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল গোটা উপজেলা জুড়ে।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ২৭৯ প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে প্রায় ৭৫ হাজার কপি চিঠি বিতরণের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন তিনি।
একই সময়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ করা হয় ৫ তারিখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে পত্রটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ইউএনও সারমিনা সাত্তার লিখেছেন ‘সুপ্রিয় অভিভাবক, আসসালামুর আলাইকুম। ‘ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আপনার সন্তানের বার্ষিক পরীক্ষা। সব বাবা-মায়েরই স্বপ্ন থাকে সন্তান খুব ভালো রেজাল্ট করবে। ক্লাসের টপার হবে। আপনার সন্তান যদি পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায় তবে সেটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু যদি না পায় তাহলে অনুরোধ থাকবে, তাদের ওপর নিজের বিশ্বাসটুকু হারাবেন না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন। তার নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ওপর তাকে আস্থা রাখতে বলুন।সে চাইলেই সামনে আরো ভালো করতে পারবে এতটুক আত্মবিশ্বাস তাকে দিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছুই নেই। এটি কেবল একটি ক্লাশ পরীক্ষা। জীবনের আরো বহু পথ পাড়ি দিয়ে আরো বহু পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। ক্লাসের এই পরীক্ষাগুলো দিয়ে তাকে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করা হচ্ছে কেবলই।
কেবলই পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে সন্তানকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তান নিঃসন্দেহে বহু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশগুলো প্রকাশের সুযোগ করে দিন। একদিন তার প্রতিভা দিয়েই সে বিশ্বজোড়া খেলোয়াড় হবে অথবা কিংবদন্তী শিল্পী অথবা স্বনামধন্য কোনোও উদ্যোক্তা। পুরো বিশ্ব জয় করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আপনার সামনেই সে বলবে, আমি পেরেছি। তোমাদের সন্তান পেরেছে। সে পর্যন্ত তার হাত ধরে তাকে সুন্দর আগামীর পথে আপনিই এগিয়ে চলুন।’
ইউএনও কর্তৃক এমন অভিনব একটি চিঠি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের দৃষ্টিগোচর হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
ইনোসেন্ট চাইল্ড স্কুলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রথম হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার যে মেসেজ টা উনি অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন এটি একদম অভিনব একটি বিষয়। বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
তিনি আরো বলেন, কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি অলক ঘোষ ছোটন স্যারের হাতে সকল কিন্ডারগার্টেনের জন্য মোট ১০ হাজার টিঠি দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার এ বিষয়ে জানান, শিক্ষার্থীদের ভালোলাগার গুরুত্ব দিতে এবং বাচ্চাদের সুপ্ত প্রতিভা নষ্ট না করতে অভিভাবকদের প্রতি এই খোলা চিঠি লিখা। পড়াশোনা অবশ্যই দরকার কিন্তু সত্যি বলতে পড়াশোনাই সফলতার একমাত্র উপায় না। শুধুমাত্র ফলাফল দিয়েই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা আমাদের এক ধরনের মানসিকতা হয়ে গেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ শুধু ফলাফল দিয়ে সার্বজনীন উন্নয়ন হয় না। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার দরকার আমাদের অভিভাবকদের। তাদেরকে তাদের মতো বিকশিত হতে দিতে হবে তারা কোন না কোন দিকে সফল হবে যদি বাবা-মা বিশ্বাস ও আস্থা রাখে।